বেছে নিয়েছেন বউ, স্বামী। বদল করেছেন পরস্পরের দাম্পত্য জীবন। বদল বউদের একজন রোমানা সুখেই আছে এখন। দেখতে-শুনতেও মন্দ নয়। সুন্দরী বলে গ্রামের সবাই তাকে বউ সুন্দরী হিসেবে চেনে। বউ এবং স্বামী বদলের পর নতুন স্বামী শহিদুলের অভাবী সংসারে রোমানা নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। নিজের জায়গাজমি এমনকি মাথা গোঁজার মতো ঘর নেই তার। তবুও অশান্তিতে নেই রোমানা। যা জোটে তাই খেয়ে শহিদুলের নতুন সংসারে আশায় বুক বেঁধেছে। সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে নতুন কোন অতিথির। বউ বদল নিয়ে গ্রামের সবার মুখে মুখে নানা কথা থাকলেও রোমানা এ বিষয়ে আর পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। তবে বদল হওয়া আরেক বউ হাসিনা বেগম সাংবাদিক এসেছে শুনে ঘরে তালা লাগিয়ে গা-ঢাকা দেন। গ্রামবাসী হাফিজার রহমান জানান, চালচুলো না থাকলেও তাদের মধ্যে ভালবাসা আছে। ভালবাসার কারণে তারা নিজেরা বউ বদল করেও সুখে সংসার করছে। মন খুলে অসঙ্কোচে এগিয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে কথা বলেন দুই বন্ধুর বদল হওয়া বউয়ের একজন রোমানা বেগম। তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচগাছি শান্তিরাম গ্রামে। প্রাইমারি পর্যন্ত পড়ালেখা করে অবশেষে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। ২০০৪ সালের শেষের দিকে তার বিয়ে হয় একই উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামের তারা মিয়ার সঙ্গে। স্বামী কবিরাজি ব্যবসা করে। তাদের এক ছেলে-সন্তান- নাম রুবেল। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে গিয়ে পরিচয় হয় তার স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তার বাড়ি একই উপজেলার উজান বোচাগাড়ী গ্রামে। সে বিবাহিত। তার স্ত্রীর নাম হাসিনা বেগম। বিয়ে হয় ১৭ বছর আগে। দেখতে-শুনতে সুন্দর। তাই বিনা যৌতুকে বিয়ে হয় শহিদুলের সঙ্গে। তার ঘরেও এক ছেলে। বয়স ৫ বছর। তাদের বাড়ি তিস্তা নদীর পাড়ে উজান বোচাগাড়ী গ্রামে। নিজের কোন জমিজমা নেই। যা ছিল তিস্তা নদীতে গেছে। তাই এখন বাধ্য হয়ে তিস্তাপাড়ের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। নিজের ঘর নেই, বোনের ঘরে তার থাকার আশ্রয়। শহিদুল ও তারা মিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বের কারণে একে অন্যের বাড়িতে যাতায়াত ছিল অবাধে। এ সুবাদে শহিদুলের স্ত্রী হাসিনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তারা মিয়ার। একপর্যায়ে তা শারীরিক সম্পর্কে গিয়ে দাঁড়ায়। বিষয়টি গ্রামে জানাজানি হয়ে যায়। একপর্যায়ে হাসিনা প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় তারা মিয়ার চণ্ডীপুরের বাড়িতে। স্বামী হিসেবে দাবি করে তার ঘরে ওঠে। তারা মিয়ার স্ত্রী রোমানা প্রথমে স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি মেনে নেয়নি। অনেক বাধা দেয়ার চেষ্টা করেও হাসিনাকে বোঝানো যায়নি। অবশেষে রোমানা নিজের সংসারে হাসিনাকে রেখে নিজে চলে যান স্বামীর বন্ধু শহিদুল ইসলামের ঘরে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামের পর গ্রাম মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লে কানাঘুষা শুরু হয়। রাগে ক্ষোভে যন্ত্রণায় রোমানা নিজের সংসার ছেড়ে স্বামীর বন্ধুর সংসারে গিয়ে তাকে স্বামী হিসেবে দাবি করলে শহিদুল তাকে বরণ করে নেয়। সরজমিন খবর সংগ্রহে গেলে সাংবাদিক এসেছে শুনে বর্তমান তারা মিয়ার স্ত্রী হাসিনা তার ঘরে তালা লাগিয়ে গা-ঢাকা দেন। তারা মিয়ার ভাবী অজুফা খাতুন এগিয়ে এসে বলেন, ভাই গ্রামে মুখ দেখাতে পারছি না। আমার দেবর তারা মিয়া তার বন্ধুর সঙ্গে বউ বদল করেছে। পেপারত ছাপা হচে। বিভিন্ন গ্রামের মানুষ তাক দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় করে। হামার খুব অসুবিধা। তবে সাংসারিক জীবনে বদল হওয়া বউকে নিয়ে সুখেই আছে বলেন জানান তিনি। বউ বদলের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি যাতে আইনের বাইরে না যায় সেজন্য এগিয়ে আসেন চণ্ডীপুর ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম। তিনি বউ বদলের বিষয়টি আইনের আওতায় আনতে বিবাহ রেজিস্ট্রার কাজী সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে তিস্তাপাড়ের শহিদুলের বাড়িতে যান। তারপর গ্রামের লোকজন ডেকে প্রথমে হাসিনাকে তালাক দিয়ে ৩০ হাজার টাকা দেন মোহরানায় বিয়ে পড়ানো হয় রোমানাকে। বিয়ে শেষে উপস্থিত গ্রামবাসীর মধ্যে বিতরণ করা হয় আখের গুড়। তাতেই খুশি গ্রামের লোকজন। কৌতূহলী লোকজনের বেশির ভাগই বিয়ে মেনে নিলেও মহিলারা বিষয়টি অতি বাড়াবাড়ি বলে মনে করেছেন। তাদের মধ্যে কোহিনুর নামের পাশের বাড়ির এক গৃহবধূ বলেন, নারীদের একবারই বিয়ে হয়। এটা ক্যামন কাহিনী বাহে। বউ আবার বদল হয় নাকি। বউ বদলের বিষয়টি গ্রামের লোকজন স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি। তাদের বিভিন্ন জনের নানা মতামত রয়েছে। কেউ বলেন এরা পাজি। কেউ বলেন লাইলী-মজনু। তবে বন্ধু শহিদুল এবং তারা মিয়াকে পাওয়া যায়নি। তারা দু’জনেই কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।
বউবদল অতঃপর
রোমানা ও হাসিনা। তারা মিয়া ও শহিদুল। চালচুলো নেই তাদের। অভাবের সংসার। কিন্তু অভাব ছিল না ভালবাসার। তাই পশ্চিমা জীবনের সুইঙ্গিং বা সোয়াপিং সম্পর্কে না জানলেও, হলিউডি ছবি ‘বব অ্যান্ড কেরল অ্যান্ড টেড অ্যান্ড এলিস’ (১৯৬৯) সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকলেও তিস্তাপাড়ের শান্তিরাম গ্রামে সে রকমই এক ভালবাসার টানে তারা গড়ে তুলেছেন শান্তির নীড়। নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছেন নিজের ঘর-সংসার।
Post A Comment:
0 comments:
Post a Comment