হস্তমৈথুন
হস্তমৈথুন, আত্মমৈথুন, স্বমেহন বা স্বকাম একটি যৌনক্রিয়া যাতে একজন ব্যক্তি নিজের যৌনাঙ্গ বা অন্যান্য কামোদ্দীপক অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে হাত বা অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা বস্তু দ্বারা আলোড়ন করে কামোদ্দীপ্ত হওয়া বা বিশেষ করে রাগমোচনে (orgasm, অর্থাৎ কামোদ্দীপনার চরম পর্যায়) পৌছানোকে বোঝায়। মানুষ ছাড়াও নানা বন্য ও গৃহপালিত পশু হস্তমৈথুন করে থাকে। হস্তমৈথুন মূলত স্বকাম ; তবে এতে মানুষ স্বীয় হাত-আঙ্গুলি ছাড়াও যৌনখেলনা যেমন কৃত্রিম যোনি বা কৃত্রিম শিশ্ন ব্যবহার করে থাকে। কৌশল হস্তমৈথুনের মূল কৌশল উভয় লিঙ্গের ক্ষেত্রেই একই রকম, আর তা হচ্ছে যৌনাঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা নাড়াচাড়া ও ঘর্ষণ করা। এটি আঙুল দ্বারা বা কোনো কিছুর মাধ্যমেও (যেমন: বালিশ) হতে পারে। পায়ুপথে আঙুল প্রবেশ করানোর মাধ্যমে ঘর্ষণ সৃষ্টি করার মাধ্যমেও হস্তমৈথুন হতে পারে, যা পায়ু মৈথুন নামে পরিচিত। এছাড়া বৈদ্যুতিক কম্পক বা ভাইব্রেটরের (Vibrator) মাধ্যমেও ভালভা বা শিশ্নকে উত্তেজিত করে তোলা যায়। এটি একই সাথে যোনি ও পায়ু পথেও প্রবেশ করানো যায়। সমঝোতামূলক বা পারস্পরিক হস্তমৈথুনের ক্ষেত্রে উভয় লিঙ্গের সদস্যরা তাদের পরস্পরের স্তনবৃন্ত বা অন্যান্য কামোত্তেজক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে স্পর্শ করাকেও উপভোগ্য মনে করতে পারেন। হস্তমৈথুনকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য বাড়তি লুব্রিকেটিং (ঘর্ষণ তাপরোধী এক প্রকার তৈলাক্ত পদার্থ) পদার্থও ব্যবহার করার চলও রয়েছে। পুরুষের হস্তমৈথুন পুরুষের হস্তমৈথুন সচরাচর স্বীয় শিশ্ন হাতের মুঠিতে আঁকড়ে ধরে ওপর-নিচ ওঠানামা করে পুরুষ মানুষ হস্তমৈথুন করে থাকে। এর ফলে এক পর্যায়ে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌছেঁ এবং বীর্যপাত হয়ে রাগমোচন অর্থাৎ চরমানন্দ লাভ হয়। নারীর হস্তমৈথুন নারীর হস্তমৈথুন নারীর হস্তমৈথুনের কৌশলের মধ্যে রয়েছে ভালভা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘর্ষণ করা, বিশেষ করে ভগাঙ্কুরে। এই ঘর্ষণ হতে পারে তার অনামিকা বা মধ্যমা আঙুলের দ্বারা। কিছুক্ষেত্রে জি-স্পটে ঘর্ষণ সৃষ্টির জন্য যোনিপথে এক বা একাধিক আঙুল প্রবেশ করানো হয়। হস্তমৈথুনের সময় যোনি ও ভগাঙ্কুরকে উত্তেজিত করে তুলতে বিভিন্ন কৃত্রিম বস্তুর সাহায্য নেওয়া হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে ভাইব্রেটর বা কম্পক, ডিলডো বা কৃত্রিম শিশ্ন, বা বেন ওয়া বল। অনেক নারী হস্তমৈথুনের সময় অপর হাতের দ্বারা নিজেদের স্তন ও স্তনবৃন্তে হাত বুলাতে পছন্দ করেন। কারণ এটি যৌন উত্তেজক অঙ্গ ও উত্তেজনা সৃষ্টিতে এর ভূমিকার রয়েছে। আবার কেউ কেউ পায়ু উত্তেজনাও উপভোগ করেন। হস্তমৈথুনের জন্য যোনিপথ পিচ্ছিল করতে অনেকে বাড়তি লুব্রিকেটিং বা তৈলাক্ত পদার্থ ব্যবহার করেন, বিশেষ করে যখন কোনো কিছু প্রবেশ করানো প্রয়োজন হয়। কিন্তু এটির ব্যবহার সকল স্থানে প্রচলিত নয়। অনেক নারী তাঁদের নিজেদের প্রাকৃতিক লুব্রিকেশনকেই যথেষ্ট বলে মনে করেন। নারীরা প্রধানত যোনি অভ্যন্তরস্থ ভগাঙ্কুর আঙ্গুলের সাহায্যে নাড়াচাড়া করে কামোত্তেজনা প্রশমিত করে থাকে। তবে এতে পুরুষের বীর্যপাতের ন্যায় কোনও চরম ঘটনা ঘটে না। নারী হস্তমৈথুনের জন্য পোড়ামাটির লিঙ্গ ব্যবহার করে বলে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। পারস্পরিক হস্তমৈথুন দুজন পুরুষ একে অন্যের লিঙ্গ নাড়াচাড়া করে বীর্যপাত করিয়ে দিলে একে বলা হয় পারস্পরিক হস্তমৈথুন। তেমনি দুজন নারী পরস্পরের যোনিতে হাত তথা অঙ্গুলি চালনা করে রাগমোচন করলে তাও হবে পারস্পরিক হস্তমৈথুন। পারস্পরিক হস্তমৈথুনে যেহেতু দুজন মানুষের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া হয়ে থাকে তাই একে আর স্বকাম বা আত্মকাম বলা চলে না। হার, বয়স, ও লিঙ্গ হস্তমৈথুনের হার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। কারো যৌন ইচ্ছা বা হরমোনের মাত্রা তা যৌন উত্তেজনা, যৌন অভ্যাস, স্বাস্থ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। ই. হাইবি এবং জে. বেকার পরীক্ষা করে দেখেছেন যে কোনো স্থানের সংস্কৃতিও হস্তমৈথুনের হারকে প্রভাবিত করে।এছাড়াও হস্তমৈথুনের সাথে কিছু চিকিৎসীয় কারণও জড়িত মানুষের মধ্যে হস্তমৈথুনের হার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন রকমের জরিপ ও গবেষণা হয়েছে। আলফ্রেড কিনসের ১৯৫০-এর দশকের এক গবেষণায় বলা যায়, মার্কিন নাগরিকদের মাঝে ৯২% পুরুষ ও ৬২% নারী তাঁদের জীবনকালে অন্তত একবার হস্তমৈথুন করেছেন।[৮] ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের মানুষের মাঝে করার একটি জরিপেও কাছাকাছি ফলাফল পাওয়া যায়। জরিপে দেখা যায় ১৬ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে ৯৫% পুরুষ ও ৭১% নারী তাঁদের জীবনের যে-কোনো সময়ে অন্তত একবার হস্তমৈথুন করেছেন। সাক্ষাৎকারের চার সপ্তাহ আগে হস্তমৈথুন করেছেন এমন পুরুষের হার ৭১% ও নারী ৩৭%। অপর দিকে ৫৩% পুরুষ ও ১৮% নারী জানিয়েছেন যে, তাঁরা এই সাক্ষাৎকারের ১ সপ্তাহ আগে হস্তমৈথুন করেছেন। ২০০৯ সালে নেদারল্যান্ড ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সাথে যুক্তরাজ্যেও বয়সন্ধি কালীন ছেলে-মেয়েদের কমপক্ষে প্রতিদিন হস্তমৈথুন করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়। অর্গাজম বা রাগমোচনকে শরীরের জন্য উপকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে শিশু গর্ভবতীর ও যৌন সংক্রামক রোগের হারের প্রাপ্ত উপাত্ত লক্ষ্য করে, তা কমিয়ে আনতে এই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়, এবং এটিকে একটি ভালো অভ্যাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিতর্ক হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক যৌনকর্ম অথবা যৌনবিকৃতি কিনা এই বিষয়ে দীর্ঘকাল থেকে বিতর্ক আছে। বিভিন্ন ধর্মে হস্তমৈথুন একটি নিষিদ্ধ যৌনকর্ম, কিন্তু অনেক বৈজ্ঞানিক এটিকে মানুষের স্বভাবী যৌনক্রিয়া হিসেবে গণ্য করেছেন। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর হস্তমৈথুন কুফল কি, তা নিয়েও বিতর্ক চলমান। বিবাহিত ব্যক্তিরা কেন হস্তমৈথুন করে সে প্রশ্নটি নিয়েও গবেষণা চলছে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, হস্তমৈথুন অনেকের জন্য একটি অনিবার্য অভ্যাসে (obsessive compulsive behavior) পরিণত হয়। ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে হস্তমৈথুন বিশ্বজুড়ে প্রাকঐতিহাসিক যুগের বহু শিলাচিত্রে পুরুষের হস্তমৈথুন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ থেকে ধারণা করার হয়, অপ্রাকৃতিক যৌন আচরণের সাথে মানুষের পরিচয় প্রাচীন যুগ থেকেই। মাল্টা দ্বীপের এক মন্দির সংলগ্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত, খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় চতুর্থ শতকে নির্মিত একটি মাটির ভাস্কর্যে একজন নারীর হস্তমৈথুরত সময়ের চিত্রও পাওয়া গেছে।[১১] তদুপরি, প্রাচীন যুগে মূলত পুরুষের হস্তমৈথুনের প্রমাণই বেশি পাওয়া যায়। তাই ধারণা করা হয় সে সময় এটিই বেশি প্রচলিত ছিলো। প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীন সুমেরীয়দের যৌনতার বিষয়ে শিথিল ধ্যানধারণা পোষণ করতো, এবং হস্তমৈথুন সেখানে সক্ষমতা তৈরির একটি উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এটি একাকী বা সঙ্গীর সাথে উভয়ভাবেই সম্পন্ন হতো। প্রাচীন মিশরে পুরুষের হস্তমৈথুন আরো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতো। যখন কোনো দেবতার দ্বারা হস্তমৈথুন সংঘটিত হতো, তখন তা অনেক বেশি সৃষ্টিশীল ও জাদুকরী কাজ হিসেবে বিবেচিত হতো। বিশ্বাস করা হতো মিশরীয় দেবতা আতুম হস্তমৈথুনের মাধ্যমে হওয়া বীর্যপাতের দ্বারা এই বিশ্বজগত সৃস্টি করেছেন, এবং সেই সাথে নীল নদের পানি প্রবাহও তার বীর্যপাতের হার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এর সূত্র ধরেই মিশরীয় ফারাওদেরও আনুষ্ঠানিকভাবে নীল নদে হস্তমৈথুন করতে হতো।
Post A Comment:
0 comments:
Post a Comment